Tuesday, February 2, 2016

দেশে বসে যেভাবে অ্যামাজন থেকে আয় করবেন!

অনলাইন বিপণন ব্যবস্থা ‘অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং’ নিয়ে দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান মার্কেটেভার গড়ে তুলেছেন তরুণ উদ্যোক্তা আল-আমিন কবির। ফক্সনিউজ, এন্টারপ্রেনার ডটকমের মতো আন্তর্জাতিক মাধ্যমেও প্রশংসিত হয়েছে তাঁর উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেও পেয়েছেন বিশেষ পুরস্কার। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে লিখেছেন আজ
034700Pic-01
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইট অ্যামাজন (Amazon.com)। সাইটটিতে প্রতি মিনিটে গড়ে ৮৬ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য বিক্রি হয়। বিপণন কৌশলের অংশ হিসেবে ‘অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম’ নামে বিশেষ একটি সুবিধা আছে এ সাইটে। বিশ্বের যে কেউ এ প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে অ্যামাজন পণ্যের বিক্রি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারেন। করতে পারেন আয়। এ প্রোগ্রামে যারা কাজ করেন তাদের বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। অ্যামাজনে লাখো পণ্যের সম্ভার। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের তাই আয়ের সম্ভাবনাও বিস্তর। বিক্রির ওপর ভিত্তি করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কমিশন দেয় অ্যামাজন। যত বেশি ডলারের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন, আপনার কমিশন তত বাড়বে। মার্কেটাররা ৪ থেকে ৮.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন।
যেভাবে বিপণন
অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য একটি নিশ ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়। নিশ সাইট মানে হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের প্রতি আগ্রহ আছে এমন ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইট তৈরি করা। ধরুন আপনি সাইকেল বিক্রি করার জন্য একটা ওয়েবসাইট তৈরি করলেন। এ ক্ষেত্রে আপনার ওই সাইটটি একটা নিশ সাইট, আর আপনার নিশ হচ্ছে সাইকেল। অ্যামাজনে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে আয় করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে নিশ সাইট। মূল মডেলটি হচ্ছে, আপনি একটি নিশ সাইট তৈরি করবেন, এরপর ওই নিশ সাইটের জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) করবেন। ভালোমতো এসইও করলে গুগলে নির্দিষ্ট ফ্রেজ কিংবা কিওয়ার্ডে আপনার ওয়েবসাইটটি দেখা যাবে।
সেখান থেকে আপনি প্রচুর ভিজিটর পাবেন, আপনার কাজ হচ্ছে ওই ভিজিটরকে অ্যামাজনে পাঠানো। এরপর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ওই ভিজিটর অ্যামাজন থেকে যা-ই কিনবে, তার জন্য আপনি কমিশন পাবেন।
নিশ সাইট তৈরি করার জন্য কয়েকটি ধাপ রয়েছে।
পরিকল্পনা, নিশ এবং কিওয়ার্ড রিসার্চ : শুরুতে পরিকল্পনা করতে হবে। আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে আপনি কোন ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন। অ্যামাজনের লাখ লাখ পণ্যের মধ্য থেকে আপনি ইচ্ছেমতো এক বা একাধিক নিশ নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। তবে নিশ পছন্দ করেই কাজ শুরু করলে চলে না, একটি নিশ সাইটের মূল লক্ষ্য থাকে সার্চ ইঞ্জিন থেকে ভিজিটর আনা, আর তাই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের প্রথম ধাপ, কিওয়ার্ড রিসার্চ করেই নিশ চূড়ান্ত করতে হয়।
কিওয়ার্ড রিসার্চ : কিওয়ার্ড হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট Phraseবা Term, যেটি লিখে ব্যবহারকারীরা গুগলে তথ্য খুঁজে থাকেন। ধরুন আপনি Mountain Bike কিনবেন, আপনার টার্গেট হচ্ছে বাজারের সেরা মাউন্টেন বাইকটি কেনা। তাহলে আপনি গুগলে সার্চ করবেন Best Mountain Bike কিংবা Best Mountain Bikesলিখে। এখানে Best Mountain Bike ও Best Mountain Bikes হচ্ছে মাউন্টেন বাইক নিশের কিওয়ার্ড। নিশ সাইটের শুরুতে নিশ রিসার্চ এবং কিওয়ার্ড রিসার্চ তাই প্রথম ধাপ।
google.com/Adwords থেকে Keyword Planner টুলের মাধ্যমে কিওয়ার্ড রিসার্চ করা যায়।
কমপিটিশন অ্যানালিসিস : কিওয়ার্ড রিসার্চের পর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত কিওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজে বের করা। আপনার কিওয়ার্ড যদি ‘বেস্ট মাউন্টেন বাইক’ হয়, তবে এই কিওয়ার্ডে গুগলের প্রথম পেজে আছে, এমন ১০টি ওয়েবসাইটকে নিয়ে খুব ভালোমতো গবেষণা করা। কারণ, আপনাকে সেখান থেকে যেকোনো একজনকে সরিয়ে প্রথম দশে স্থান দখল করতে হবে। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী কত শক্তিশালী সেটি না জেনে কখনোই কি তাদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা যায়?
ডোমেইন হোস্টিং নির্বাচন : আপনার নিশ ও কিওয়ার্ড নির্বাচন হয়ে গেলে পরবর্তী কাজ হচ্ছে ডোমেইন ও হোস্টিং নির্বাচন। ডোমেইন নাম হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের নাম, যেমন : সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ডোমেইন হচ্ছে google.com । ডোমেইন নির্বাচন হয়ে গেলে পরের কাজটি হচ্ছে হোস্টিং নির্বাচন করা এবং সেটআপ করা। মনে রাখবেন ডোমেইন ও হোস্টিং ভালো কম্পানি থেকে কেনা জরুরি। একই সঙ্গে আপনার মেইন কিওয়ার্ড বা কিওয়ার্ডের মূল অংশ ডোমেইন নামের সঙ্গে থাকাটা ভালো।
ওয়েবসাইট সেটআপ : ডোমেইন ও হোস্টিং রেডি হওয়ার পর আপনার কাজ হচ্ছে ওয়েবসাইট সেটআপ করা। বিশ্বব্যাপী ব্লগ ও ম্যাগাজিন সাইটের জন্য সাধারণত কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সিএমএস।
কনটেন্ট : সঠিকভাবে সাইট সেটআপ করার পর আপনার সাইটে কনটেন্ট দিতে হবে। অন্য কোনো সাইট থেকে কনটেন্ট নকল না করে অবশ্যই নিজস্ব ভালোমানের কনটেন্ট দিতে হবে। সাইটটি সম্পূর্ণ তৈরি হওয়ার পর এবার অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটে একটি অ্যাকাউন্টের জন্য আবেদন করুন। অনুমোদন পেলে নিজের সাইটে অ্যাফিলিয়েট লিংক বসানো শুরু করুন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা : আপনার নিশ সাইট থেকে নিয়মিত আয় করতে সেটিকে গুগলের প্রথম পেজে বা পজিশনে নিয়ে যাওয়াটা জরুরি। তবে এটি সময়সাপেক্ষ কাজ। তাই দ্রুত আয় করার জন্য আপনার সাইটের সোশ্যাল মিডিয়া প্রমোশন করতে হবে।
ফেইসবুক, গুগল প্লাস, পিনটারেস্ট, টুইটার, ইউটিউবের মাধ্যমে নিশ সাইটের প্রচারণা চালানো যেতে পারে।
লিংক বিল্ডিং : ওয়েবসাইটটি গুগল প্রথমে র্যাংক করবে নাকি পরে—সেটি নির্ভর করছে দুটি বিষয়ের ওপর। প্রথম কনটেন্ট, দ্বিতীয় র্যাংক লিংক। এই র‌্যাক লিংক তৈরির প্রক্রিয়াটি লিংক বিল্ডিং হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন জনপ্রিয় সাইটের লিংক আপনার সাইটে যুক্ত করাই মূলত লিংক বিল্ডিং। সাইটগুলোর ওয়েবমাস্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব লিংক যোগ করতে হয়। যত বেশি সাইটের লিংক যোগ হবে তত ভালো। আপনার ওয়েবসাইটটি গুগলের প্রথমে নিয়ে আসার জন্য লিংক বিল্ডিং খুবই জরুরি।
কনভার্সন রেট অপটিমাইজেশন : কনভার্সন রেট হচ্ছে কতজন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন এবং তাঁদের মধ্যে কতজন আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে কোনো পণ্য কিনছেন তার হার। এই হার বাড়ানোর লক্ষ্যে যে কাজ, তাকে বলা হয় কনভার্সন রেট অপটিমাইজেশন। আপনার ওয়েবসাইট গুগলে একবার র্যাংক হয়ে গেলে আপনার কাজ হচ্ছে ভালোমতো কনভার্সন রেট অপটিমাইজেশন করা।
সাইট র‍্যাংক হলে অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে খুঁজে বের করুন কোন পোস্টগুলোয় সবচেয়ে বেশি ভিজিটর আসছে। সেই পোস্টগুলোকে ফাইন-টিউন করুন। যে কনটেন্টগুলো ওই পোস্টে আছে, সেগুলো আবারও এডিট করুন। নতুন কনটেন্ট অ্যাড করুন। কল-টু-অ্যাকশন বাটন ভালো করে অপটিমাইজ করুন।
স্কেলআপ : স্কেলআপ হচ্ছে কোনো সাইট একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে পৌঁছানোর পর সেটিকে আরো সফলতার দিকে নিয়ে যাওয়া। সাইট একবার র্যাংক হয়ে গেলে এবং নিয়মিত আয় করা শুরু করলে এরপর আপনার কাজ কেবল সাইটটিকে স্কেলআপ করা এবং নিয়মিত আয়ের টাকা ঘরে তোলা। স্কেলআপ স্টেজে মূল লক্ষ্য থাকে, প্রতি মাসে কিভাবে ইনকাম আরো বাড়ানো যায়।
কোথায় শিখবেন
বিশ্বব্যাপী অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং খুবই জনপ্রিয়। অনলাইনেই তাই অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শেখার অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। Marketever.comএ এ-বিষয়ক অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। এ ছাড়া Amazon Affiliat Bangladesh নামে ফেইসবুকে একটি গ্রুপের মাধ্যমেও বাংলাদেশি অভিজ্ঞ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের সহায়তা পাওয়া যায়।
অনলাইনে শেখার জন্য বাংলায় ভিডিও টিউটোরিয়ালও রয়েছে, AzonRockstar.com থেকে এই ভিডিও টিউটোরিয়ালের তথ্য পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে মার্কেটেভার এবং এডু-মেকারসহ (www.edu-maker.com) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হাতেকলমে এ-বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
লক্ষ করুন
# বেশির ভাগ অ্যামাজন পণ্যই বিভিন্ন কিওয়ার্ডে ক্রেতারা গুগলে সার্চ করে থাকে। তাই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন জানলে খুব সহজেই তাদের কাছে অ্যামাজনের এই পণ্যগুলো বিক্রি করা যায়।
# ইন্টারনেটে কেনাকাটার জন্য অ্যামাজন বিশ্বস্ত নাম। তাই যখনই কেউ অ্যামাজন ডটকমের কোনো প্রোডাক্ট রিকমেন্ড করে, তখন ভিজিটররা সেটি অনেক বেশি বিশ্বাস করে, কেনার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়।
# ধরুন, আপনি একটি সাইকেল বিক্রির ওয়েবসাইট করেছেন। সাধারণত, যাঁরা ক্রেতা, তাঁরা কেবল একটা সাইকেলই কিনবে না, সঙ্গে হেলমেট ও অন্যান্য সাইক্লিং সামগ্রীও কিনবে। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের মজা হচ্ছে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন কেবল সাইকেলের, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য পণ্য।
# অনলাইন কেনাকাটায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতারা একাধিক পণ্য কিনে থাকেন। সুতরাং একটি পণ্যের প্রচারণা চালিয়ে প্রচুর পণ্য বিক্রির আয় পাওয়া যায়।
# একজন ক্রেতার পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাধারণত যে ধরনের তথ্য প্রয়োজন তার সবই অ্যামাজন ডটকমে রয়েছে। রয়েছে ইউজার রিভিউ, রেটিং থেকে শুরু করে প্রোডাক্টের একাধিক ছবি কিংবা ভিডিও। অ্যামাজনে পণ্য বিক্রির হার তাই অন্য সব ওয়েবসাইটের চেয়ে বেশি।

No comments:
Write comments

Categories