Tuesday, January 19, 2016

কত দামি কম্পিউটার লাগবে গ্রাফিক ডিজাইন করতে??

Computer

গ্রাফিক ডিজাইন যারা শিখছেন, অথবা শিখার পর কাজ করার চেষ্টা করছেন, তারা অনেকেই দ্বিধার মধ্যে থাকে যে কি ধরনের কম্পিউটার দিয়ে কাজ করলে ভাল হয়, যাদের কম্পিউটার নেই যারা কম্পিউটার কিনবে তারাও হয়ত বুঝতে পারে না, কি রকম কম্পিউটার কিনলে আসলে ভাল হয়। কত দামের কম্পিউটার কিনলে প্রোফেসনাল গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ করা যাবে। অনেকেই পুরাতন কম্পিউটার আপগ্রেড করতে চান। আশা করছি এই লেখাটা তাদের কাজে লাগবে।

কেনার আগে ঠিক করে নিন আপনার কাজের ক্ষেত্র

আপনি যখন নতুন কম্পিউটার কিনবেন অথবা কম্পিউটার আপগ্রেড করবেন আমার মতে আপনি আগে বের করুন আপনি গ্রাফিক ডিজাইন কোন কাজ এর জন্য করবেন।আপনি যদি মাত্র গ্রাফিক ডিজাইন শুরু করে থাকেন অথবা শুরু করবেন ভাবছেন তাহলে আপনার যদি কম্পিউটার থাকে তাহলে যেটা আছে সেটা দিয়ে এই শুরু করতে পারবেন সেটা একদম সাধারন কম্পিউটার হলে ও সম্ভব। আপনি যখন সম্পূর্ণভাবে প্রফেশনালি শুরু করবেন তখন আপনাকে কম্পিউটার আপগ্রেড করতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে এমন ও না আপনার খুব উচ্চমানের কম্পিউটার লাগবে। আপনি ঠিক করেন আপনি কোন কাজটি করবেন আপনি যদি ফটোশপ এর কাজ করেন তাহলে আপনাকে ফটো এডিটিং এর কাজগুলি বেশি করতে হবে আর সে ক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার এর মান অনেক ভাল হতে হবে আর আপনি যদি লোগো ডিজাইন, প্রিন্ট ডিজাইন এর কাজের কথা চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে Adobe Illustrator অথবা Corel draw এর কাজ বেশি করতে হবে যার জন্য খুব উচ্চমানের কম্পিউটার প্রয়োজনীয় নয়।

গুরুত্ব দিন র‍্যামকে প্রসেসর এর থেকে ও বেশি

গ্রাফিক ডিজাইন এ ফটোশপ অনেক জনপ্রিয় একটা সফটওয়্যার আর ফটোশপ হল “Memory ‘Hog” যার অর্থ হল যে সফটওয়্যার চালাতে মেমরি বেশি প্রয়োজন হয়। তাই ভাল হয় আপনি যদি বেশি করে র‍্যাম নিয়ে নেন এবং এখানে খরচ ও কম পড়বে। ফটোশপ সব সময় অনেক ডাটা নিয়ে কাজ করে আর এই ডাটাগুলো কম্পিউটার র‍্যাম এ জমা থাকে তাই র‍্যাম এর স্পেস বেশি থাকা প্রয়োজন। আপনি যখন অনেক বড় বড় ফাইল নিয়ে কাজ করবেন যেমন আপনার বায়ার আপনাকে এমন ও ছবি দিবে যেগুলির এক একটার সাইজ ৫০ মেগা থেকে শুরু করে ১৫০ মেগাবাইট পর্যন্ত অথবা তার ও বেশি হতে পারে, তারপর আপনি যখন সেই ছবি এডিটিং করা শুরু করবেন সেখানে আরও কিছু উপাদান যোগ হলে আপনার মেগা বাইট এর পরিমান আরও বেড়ে যাবে আর আপনার র‍্যাম যদি কম হয় তাহলে প্রোগ্রাম হয়ে যাবে স্লো, সেটা আপনার এবং বায়ার কারো জন্য ভাল হবে না, তাই র‍্যাম এর স্পেস বেশি করে নেন, এতে খরচ খুব একটা বেশি পড়বে না। আমি বলবো কাজের উপর নির্ভর করে আপনার র‍্যাম ৮-১৬ গিগাবাইট এর মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করেন।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনি উইন্ডোজ এর ৬৪ বিট ব্যবহার করেন আর ফটোশপ ও ৬৪ বিট এ ইন্সটল করেন না হলে বেশি র‍্যাম আপনার কোন কাজে আসবে না।

প্রসেসর ও হতে হবে ভাল মানের

গ্রাফিক ডিজাইন করার জন্য প্রসেসর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমরা জানি যে প্রসেসর কম্পিউটার এর বেশির ভাগ কাজ পরিচালনা করে তাই প্রসেসর এর ব্যাপারটি গুরুত্বসহকারে নিতে হবে।আপনার প্রসেসর যদি কম হয় তাহলে আপনি যখন অনেকগুলি ফাইল একসাথে ওপেন করে কাজ করতে চাইবেন আপনার কম্পিউটার এর গতি কমে আসবে, এবং কম্পিউটার হ্যাং ও করতে পারে তবে মনে রাখবেন অনেক ভাল প্রসেসর অনেক দাম পড়ে যাবে তাই প্রথমে র‍্যাম এর ব্যাপারটি নিশ্চিত করে প্রসেসর এর ব্যাপার এ সিদ্ধান্ত নিন।

আলাদা ভাবে গ্রাফিক কার্ড? আপনার সিদ্ধান্ত

আপনার বাজেট ভাল হলে আপনি আলাদা করে গ্রাফিক কার্ড লাগাতে পারেন কিন্তু গ্রাফিক কার্ড বেশ দামি একটা ব্যাপার আর আমি বলবো আপনি থ্রিডি এনিমেশন অথবা ভিডিও এডিটিং এর দিকে না গেলে মাদার বোর্ড এর সাথে যে গ্রাফিক কার্ড থাকে সেটাই যথেষ্ট। তবে আপনি যদি আলাদা গ্রাফিক কার্ড লাগাতে চান তাহলে বলবো আপনি OpenCL capable GPU, CUDA cores দরকারি নয়। অ্যাডোব CS6 Mercury ইঞ্জিন নিয়ে এসছে যেটা OpenGL and OpenCL এর কাজ করে। তাই nVidia কার্ড সাথে CUDA cores দরকার নেই।
মনিটর ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ
আপনি বেশি স্পেস এর র‍্যাম নিলেন, ভাল মানের প্রসেসর নিলেন, ভাল মানের গ্রাফিক কার্ড নিলেন কিন্তু দেখা গেল আপনার মনিটর এর মান ভাল না তাহলে আসলে কোন লাভ নেই। তাই ভাল কালার সিস্টেম এর মনিটর মিনিমাম ১৯২০x১২০০ পিক্সেল ডাইমেনশন। ২১-২৪ ইঞ্চি সাইজ। কালার কেলিব্রাটর সেট আপ করে নিন যদি আপনি প্রিন্ট ডিজাইন এর কাজ করেন, কারন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আপনি মনিটর এ যে কালার দেখছেন প্রিন্ট করার পর সে রকম কালার পাওয়া যায় না।


নিচে গ্রাফিক ডিজাইনার জন্য উপযুক্ত কম্পিউটার এর বিভিন্ন পার্টস এর মান এবং মূল্য এর একটি ধারনা দেয়া হল
র‍্যাম
৮ GB র‍্যাম 4000-4500 মধ্যে ভাল ব্রান্ড এর র‍্যাম পাবেন আপনি যদি মনে করেন আপনি ১৬ গিগাবাইট ব্যবহার করবেন সে ক্ষেত্রে আপনি ৮ গিগাবাইট এর দুইটি র‍্যাম একসাথে ব্যবহার করতে পারেন।
প্রসেসর
গ্রাফিক ডিজাইন এর ক্ষেত্রে Core I 3 প্রসেসর বেশ ভাল কাজ করবে। ৬০০০-১০,০০০ আপনি ইন্টেল এর বেশ ভাল মানের প্রসেসর পেয়ে যাবেন।
গ্রাফিক কার্ড
আগে ই বলেছি গ্রাফিক কার্ড গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজ এর জন্য খুব একটা জরুরি নয় মাদার বোর্ড এর সাথে যেটি থাকে সেটি ই যথেষ্ট তারপর ও আপনি যদি থ্রিডি ডিজাইন অথবা ভিডিও এডিটিং এর মতো কাজ করেন তাহলে আপনি আলাদা করে একটি গ্রাফিক কার্ড লাগিয়ে নিতে পারেন। আপনি ৩৫০০-৪০০০ টাকার মধ্যে ভাল মানের গ্রাফিক কার্ড পেয়ে যাবেন।
মনিটর
আপনি মার্কেট এ অনেক ব্রান্ড ই মনিটর পাবেন, ভাল হয় ২১-২৪ ইঞ্চি এর মধ্যে মনিটর ব্যবহার করলে কিন্তু সাইজ এর থেকে ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল কালার এর ব্যাপারটি। আপনি Samsang অথবা Dell এর মধ্যে ১০-১২ হাজার টাকায় চমৎকার HD monitor পেয়ে যাবেন।
মাদার বোর্ড
মাদার বোর্ড আপনাকে প্রসেসর এর সাথে মিল রেখে কিনতে হবে, আপনি যদি ইন্টেল এর প্রসেসর ব্যবহার করেন তাহলে ইন্টেল এর মাদার বোর্ড ব্যবহার করার কথা আমি বলবো, আপনি ৩০০০-৫০০০ টাকার মধ্যে ভাল মানের মাদার বোর্ড পেয়ে যাবেন।


সব মিলিয়ে বলা যায় আপনি যদি ৩০-৩৫ হাজার টাকার মধ্যে গ্রাফিক ডিজাইন এর জন্য পারফেক্ট একটা পরিপূর্ণ কম্পিউটার পেতে পারেন। আর আপনি যদি আপগ্রেড করতে চান তাহলে ১৫-২০ হাজার টাকার মধ্যে আপনি আপগ্রেড করাতে পারবেন।
গুরত্ব পূর্ন পোস্টঃ

লোগো ডিজাইন করতে গিয়ে কিছু ভুল আর তার সহজ কিছু সমাধান।

No comments:
Write comments

Categories